মুক্তিযোদ্ধা দবীর ভাই অসুস্থ
—————————————-
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সোশাল ওয়ার্কে পড়তেন দবীর ভাই। ছাত্রলীগের রাজনীতিতে শুধু সক্রিয় ছিলেন বললে কম বলা হবে। ভীষণ রকমের ইনভলভড ছিলেন। ৭০ এর নির্বাচনে এমপিএ আবিদ আলীর নির্বাচন করেন। কথা প্রসঙ্গে বলেন, “হাতিবান্ধায় তখন পোস্টার লাগানোর মতো কর্মী ছিল না। আমরা কয়েকজন ট্রেনে চেপে শুধু পোস্টার লাগাতেই যেতাম।আবার ট্রেনেই ফিরতাম। পায়ে হেঁটে গোটা বাজার ঘুরতে হতো। খাওয়ারও কোন ঠিক ঠিকানা ছিল না।” ৭১ এর মার্চেই পাটগ্রামে ফিরে সদলবলে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। পাটগ্রামের শিক্ষিত তরুণরা তখন কাজী নুরুজ্জামান এবং দবীর ভাইকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিল। কাজী নুরুজ্জামান এমপিএ আবিদ আলীর সাথে সংগ্রাম পরিষদের দায়িত্ব নেন। দবীর ভাই তাঁর বন্ধুদের সাথে নিয়ে বিএলএফ এ যোগ দেন। আসামের হাবলঙে ট্রেনিং শেষ করে অধ্যক্ষ শহীদুল্লাহ প্রধানের কমান্ডে হাতিবান্ধার দৈখাওয়া সীমান্তে ক্যাম্প করেন। এবং সেখান থেকেই যুদ্ধে অংশ নেন।
অক্টোবরের শেষে এমপিএ আবিদ আলী তাঁকে এসএস-২ ব্যাচে মূর্তি (মুজিব) ক্যাম্পে অফিসার্স ট্রেনিং এ যোগ দিতে বললে তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। শুধু তাই নয় তাঁর বন্ধুরা দীনার উদ্দিন, আবু তালেব, ইয়াছিনদের আবেদন ফর্মও তিনি ছিঁড়ে ফেলেন। বলেন, আমরা ভবিষ্যতে দেশ পরিচালনা করবো। আর্মি অফিসার হবো কেনো?
উল্লেখ্য যে, এই ব্যাচে আমাদের বর্তমান এমপি জনাব মোতাহার হোসেন এবং বাউরার খোরশেদ আলম বসুনিয়া যোগ দিয়েছিলেন। শ্রদ্ধেয় খোরশেদ আলম বসুনিয়া তখন যুদ্ধক্ষেত্রে প্লাটুন কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করছিলেন। পরবর্তীতে তিনি বিগ্রেডিয়ার জেনারেল পর্যন্ত হয়েছিলেন এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছিলেন। আমাদের এমপি জনাব মোতাহার হোসেন তখন দৈখাওয়া সীমান্তে শিতলকুচি শরণার্থী ক্যাম্পে কাজ করতেন। এখান থেকেই তিনি নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এসএস-২ ব্যাচের ট্রেনিং এ যান। এই ব্যাচের অফিসাররা অবশ্য আর যুদ্ধে যোগ দিতে পারেনি। সে প্রসঙ্গ ভিন্ন।
যাই হোক, দবীর ভাই সে ট্রেনিং এ যোগ দেননি। যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়েও যাননি। সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স মাস্টার্স করার পরেও কোন চাকরিতে যোগ না দিয়ে রাজনীতি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু মার্ক্সবাদে দিক্ষিত দবীর ভাই প্রচলিত রাজনীতির ধারা বা বিবর্তন বুঝতে ব্যর্থ হন। কিংবা বর্তমান রাজনীতির গতি প্রকৃতির সাথে নিজেকে মেলাতে পারেননি। জাসদের গণবাহিনীর সময় কিছুদিন আত্মগোপন করে ছিলেন। সেসময় ফরিদপুরের চর ভদ্রাসন কলেজে অধ্যাপনাও করেছেন। তারপর আবার এলাকায় ফিরে জাসদের রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকেন। কোন রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক প্রলোভনে তিনি আর দল পরিবর্তন করেননি।
চমৎকার বক্তৃতা করতেন তিনি। সাধারণ জনগণ তাঁর বক্তৃতা শোনার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতো। পার্লামেন্টে যাওয়ার সবরকম যোগ্যতাই তাঁর ছিল। কিন্তু আমাদের দেশে যা হয় আরকি। যোগ্যরা ভাত পায়না, আর অযোগ্যরা বসে সিংহাসনে।
দবীর ভাই রংপুর মেডিকেলের সাধারণ ওয়ার্ডে ধুঁকছেন। ভালো জায়গায় চিকিৎসা করার মতো টাকা পয়সাও নেই তাঁর। জীবন বিমুখ দবীর ভাইয়ের বাঁচার ইচ্ছেও তেমন একটা নেই মনে হয়। আমি অনেকবারই তাঁকে ভারতে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। পাসপোর্ট করতেই রাজী হননি।
জয় বাংলা।।।।।।। লেখাটি হুবহু তুলে ধরা হলো, লেখক, গবেষক সায়েদুল ইসলাম মিঠু এঁর ফেসবুক থেকে।