আব্দুর রাজ্জাক রাজ, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম):
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়িতে স্বাধীনতার মহান স্থপতি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮ তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সকাল ১০ টায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কার্যালয় চত্বর, ফুলবাড়ী উপজেলা কুড়িগ্রাম-এ আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেন “বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ফুলবাড়ী উপজেলা শাখা ও এর অঙ্গ সংগঠন ।
বাংলাদেশ আওয়মী লীগ ফুলবাড়ী উপজেলা শাখার সম্মানিত সভাপতি জনাব মোঃ আতাউর রহমান শেখ-এর সভাপতিত্বে ও সাধারন সম্পাদক আহাম্মদ আলী পোদ্দার রতন-এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতেই পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন মাওলানা মোঃ আজিজুল হক ।
এরপর আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন নাওডাঙ্গা ফুলবাড়ীর কৃতি সন্তান, আওয়ামী লীগ পরিবারের গর্ব ও উপদেষ্টা মন্ডলির সদস্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ফুলবাড়ী উপজেলা শাখা বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ হামিদুল হক খন্দকার । অনুষ্ঠানে তিনি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পেছনে বঙ্গবন্ধুর দেশের দল মত নির্বিশেষে সবাইকে একতাভুক্ত করতে পারার আসধারণ ক্ষমতার কথা তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, বঙ্গবন্ধু সারাজীবন দেশের জন্য দিয়ে গেছেন। সেই বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে জীবন দিতে হলো। এর চেয়ে কলঙ্কময় অধ্যায় আর কিছু নেই।
ফুলবাড়ী উপজেলা শাখা সাধারন সম্পাদক আহাম্মদ আলী পোদ্দার রতন বঙ্গবন্ধুর মহানুভবতা, সারল্য, দরদী, দেশ প্রেমের কিছু খন্ড খন্ড চিত্র তুলে ধরে বলেন, বাঙালি জাতির ইতিহাসে বেদনাবিধুর ও বিভীষিকাময় একটি দিন আজ । দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্রে বাংলার ভাগ্যাকাশে এই দিনে নেমে আসে দুর্যোগের ঘনঘটা। ১৫ই আগস্ট, তখনও ভোর হয়নি, আজানের ধ্বনিও উচ্চারিত হয়নি: ৩২ নং সড়কের ৬৭৭ নং বাড়িতে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে ঘুমন্ত। পরিকল্পনা মাফিক কিছু দুষক্রিতিকারী চক্র সামরিক আমলা, ক্ষমতালোভী চক্র বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে আক্রমণ চালায়। ঘাতকের দল ট্যাংক, কামান, মেশিনগানসহ অত্যাধুনিক মাড়াস্ত্র নিয়ে একযোগে তাঁর বাসভবন ল কার বৃষ্টির মতো গুলি ছুড়তে থাকে। একে একে হত্যা করে পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে । নিষ্পাপ শিশু রাসেল ও রেহাই পায়নি ।একদল ঘাতক রাসেলকে উপরতলা থেকে নিচে নিয়ে আসে ।মায়ের কাছে খাবারের জন্য কাঁদতে শুরু করে, রাসেল । কিন্তু ঘাতকের কাছে এই ছোট্ট শিশুর আকুতিতেও পাষাণরা গলেনি বরং উপরে নিয়ে গুলি কার নির্মমভাবে হত্যা করে। এবার স্টেনগান থেকে বঙ্গবন্ধুর বুক লক্ষ করে গুলি করে ঘাতকের দল। তাঁর বুক বিদীর্ণ করে ১৮টি গুলি। বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল, রোজি জামাল, বঙ্গবন্ধুর সহোদর শেখ নাসের, কৃষকনেতা আবদূর রন, ঘুননেতা শেখ ফজলুল মনি ও তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি, সুকান্ত বাবু, আরিফ, আব্দুল নঈম খান, রিন্টুসহ পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজন ছাড়াও সেই বিভীষিকাময় রাতে নিহত হন আরও ৮ জন। ৩২ নম্বর থেকে যেন সেই রক্তাস্রাত বাংলার সবুজ-শ্যামল কে রাঙিয়ে গড়িয়ে পড়ে বঙ্গপসাগরে। যা উপস্থিত সবাইকে আবেগ আপ্লুত করে ।
বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ ফুলবাড়ী উপজেলা শাখার সাধারন সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক মিলন , মহান নেতার জীবনাদর্শের কিছু দিক তুলে ধরে তা থেকে শিক্ষা নেবার জন্য সকলকে অনুরোধ করেন। তিনি সকলকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে অন্তরে ধারণ করে সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে প্রত্যয়ী হবার আহবান জানান ।
এ আলোচনা সভা দোআ মাহফিলে আরও বক্তব্য রাখেন ফুলবাড়ী উপজেলার- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি বাদশা মিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানর রহমান মিঠু, নজরুল ইসলাম বকসি, আহ্ববায়ক বাংলাদেশ আওয়ামী মৎসজীবী লীগ আতাউর রহমান রতন, সদস্য সচীব বাংলাদেশ আওয়ামী কৃষক লীগ লুৎফর রহমান লাভলু, সভাপতি বাংলাদেশ আওয়ামী যুব মহিলা লীগ পারুল খন্দকার ও যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ ছাত্র লীগ মোঃ সজল পোদ্দার প্রমূখ ।
পরিশেষে বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্টের সকল শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মহান আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করা হয়।