চৌধুরী মানিক বলেন,‘চীন ও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণহত্যায় পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের মদদ দিয়েছিল। ’৭৫-এ বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর তাদের মদদপুষ্ট জেনারেল জিয়া বাংলাদেশের ক্ষমতা দখল করলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা স্তিমিত হয়ে পড়ে এবং ’৭১-এর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পথও রুদ্ধ হয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এলে পুনরায় কার্যক্রম আরম্ভ হয় এবং বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ একাত্তরের গণহত্যাকে স্বীকৃতি প্রদান করে। এখন আমরা চাই ’৭১-এর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, কারণ গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি গণহত্যাকে নিরুৎসাহিত করে।’
নির্মূল কমিটির সহ সভাপতি শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, ‘একাত্তরের গণহত্যার আমি একজন ভুক্তভোগী। আমরা একাত্তরের গণহত্যার বিচার চাই ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চাই। আশা করি আমরা আমাদের সংগ্রামে ‘নেভার এগেইন’কে পাশে পাব।’
নির্মূল কমিটির সহ সভাপতি শিক্ষাবিদ মমতাজ লতিফ বলেন, ‘একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে যেতে নিরুৎসাহিত করার জন্য পাকবাহিনী ও তাদের দোসরা বেছে বেছে যুবকদের বিশেষত হিন্দুসম্প্রদায়সহ বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নির্বিচারে হত্যা করে। তারা বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করার জন্য চিকিৎসক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, ডাক্তারসহ সাংবাদিকদের নির্বিচারে হত্যা করে। আমরা ’৭১-এর গণহত্যার ঘাতক, সংগঠন ও মদদদাতাদের বিচার চাই এবং বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চাই।’
জাগরণ সাংস্কৃতিক স্কোয়াডের নির্বাহী সভাপতি আবৃত্তিশিল্পী মো. শওকত আলী বলেন, ‘’৭১-এর নিশংস গণহত্যার স্বীকৃতি বাংলাদেশ সরকার ইতোপূর্বে দিয়েছে কিন্তু আমরা এখনো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি। আমরা প্রত্যাশা করি একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য পোল্যান্ডের ‘নেভার এগেইন’ আমাদের সহায়তা করবে।’
পোল্যান্ড-এর নেভার এগেইনের সভাপতি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. রাফাল প্যানকোভস্কি বলেন, ‘আমরা হলোকস্ট-এর পুনরাবৃত্তি রোধে বিশ্বব্যাপী জনমত সংগ্রহের প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। গণহত্যা বন্ধ করতে হলে এর স্বীকৃতি এবং গণহত্যাকারীদের বিচার অত্যন্ত জরুরি। আমরা গণহত্যার বিরুদ্ধে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আন্তর্জাতিক আন্দোলনের সহযোগী। গত বছর আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবসে ব্রাসেলস-এ অনুষ্ঠিত নির্মূল কমিটির আন্তর্জাতিক সম্মেলনে নেভার এগেইন-এর পক্ষ থেকে আমরা অংশগ্রহণ করেছিলাম। বিভিন্ন সময়ে নির্মূল কমিটির আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে আমরা অংশ নিয়েছি। আমরা দৃঢ়ভাবে মনে করি বাংলাদেশের গণহত্যা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া উচিৎ। এ বিষয়ে পোল্যান্ড ও ইউরোপের অন্যান্য দেশে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকাবে।’
নেভার এগেইনের নির্বাহী সদস্য মানবাধিকার নেতা নাটালিয়া সিনায়েভা প্যানকোভস্কা বলেন, ‘ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে জার্মান ও রোমানিয়ান আর্মি আমার জন্মস্থান মালদোভার রোমা সম্প্রদায়ের উপরে গণহত্যা চালায়। রোমা জনগোষ্ঠী দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের ফলে তারা নিজেদের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করে। এক্ষেত্রে রোমা জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও বৈশ্বিক নেতাদের সহযোগিতার ফলে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় সহজ হয়। সুতরাং আমরাও চাই, যারা গণহত্যা শিকার হয়েছেন তাদের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য সহযোগিতা করতে। আমরা প্রত্যাশা করি, বাংলাদেশের জনগণ দ্রুত ’৭১-এর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাবে এবং আমরা এক্ষেত্রে সহযোগিতা করব।’
নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ‘অতীতে আমরা যেভাবে নেভার এগেনইন-এর সাথে কাজ করেছি ভবিষ্যতে এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।’
সভা শেষে বাংলাদেশের গণহত্যা নিয়ে নির্মিত নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের প্রামাণ্যচিত্র ‘জার্নি টু জাস্টিস’ প্রদর্শিত হয়।