আব্দুর রাজ্জাক রাজ, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম)প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে পণের টাকা না আনায় এক গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ স্বামী ও শ্বশুর বাড়ীর লোকজনের বিরুদ্ধে। গৃহবধূর অকাল মৃত্যুতে তার বাপের বাড়ি ও স্বজনদের আহাজারিসহ গ্রামে নেমেছে শোকের ছায়া ।
এ ঘটনায় নিহত গৃহবধূর চাচা নাসির আলী রবিবার (১৩ আগষ্ট) বিকালে বাদী হয়ে স্বামী, শ্বশুর ও শ্বাশুড়িকে আসামী করে ফুলবাড়ী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। নিহত গৃহবধুর নাম মৌসুমী খাতুন (২৬)। তিনি উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের পুর্ব ধনিরাম গ্রামের মনছুর আলীর বড় মেয়ে । তার কোন ভাই নেই ।তার বাবা আধা পাগলা ও মা অন্যত্র বিয়ে করায় তার চাচা নাসির আলী তাকে নিজের মেয়ের মত করে দেখাশুনা ও খোঁজ খবর নিতেন ।
মামলরা বিবরণে জানা যায় যে, প্রায় ৫ বছর আগে পশ্চিম ধনিরামের মোঃ রাশেদুল ইসলাম রাশেদ (৩০) ও মেীসুমী একজন আরেকজনকে পছন্দ করলে পবিরার বিষয়টি জানতে পেড়ে তাদের পারিবারিকভাবে বিয়ে দেয় । বিয়ের ২/৩ মাস পরে রাশেদ যৌতক দাবি করলে তার স্ত্রী মৌসুমী খাতুন তার অসুস্থ বাবা ও চাচাকে রাজি করিয়ে এক লক্ষ চল্লিশ হাজার (১,৪০,০০০/-) টাকা এনে দেয় । কিছুদিন যাওয়ার পর রাশেদ ও তার বাবা তাজুল ইসলাম তাকে পুনঃরায় যৌতকের চাপ দেয় । এবং যৌতক এর টাকা না আনায় নিয়মিত মৌসুমীকে নির্যাতন করতেন । তাদের এ বিষয়টি গ্রাম্য আদালতের মাধ্যমে একাধিকবার মীমাংমা করে দেওয়া হয় । মৌসুমী তার জামাই ও শ্বশর-শ্বাশুরীকে তার পরিবারের অবস্থা জানায় এবং তাদের দাবী পূরণ করতে পারবে না বলে ছাব জানিয়ে দেয় । বিয়ের পড় থেকে যৌতকের জন্য এরুপ নির্যাতন মৌমুমী খাতুনের উপর ধারাবাহিকভাবে চলতো ।
নির্যাতনের এমন ধারাবাহিকতায় গত ৮ আগষ্ট সকালে রাশেদ ও তার বাবা-মা মৌসুমীকে বাবার বাড়ী থেকে টাকা আনার জন্য চাপ দিলে মৌসুমী অস্বীকৃতি জানায়। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে রাশেদ ও তার বাবা-মাকে সাথে নিয়ে মৌসুমীকে বেদম মারধোর করে এবং এতে মৌসুমী গুরুতর আহত হয় । স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে মৌসুমীর নানা জহুরুল ইসলাম, নানার ছোট ভাই জাহেদুল ইসলাম ও চাচা নাসির আলী গুরুতর আহত অবস্থায় মৌসুমীকে দেখতে পেয়ে চেয়ারম্যান মহোদয়কে বিষয়টি জানায় । চেয়ারম্যান ঘটনা স্থলে গিয়ে মৌসুমীর অবস্থা খুবেই খারাপ দেখে হাসপাতালে নেওয়ার চাপ দেয় এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলে চলে যায় ।
কিন্তু পূর্বের নির্যাতনের অবিজ্ঞতা নিয়ে রাশেদ ও তার বাবা-মা ধামাচাপা দেয় বিষয়টি এবং মৌসুমীর আত্মীয়-স্বজনকে চিকিৎসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কৌশলে তাড়িয়ে দেয় । ৯ আগষ্ট মেীসুমীর আত্মীয়-স্বজন খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারে মৌসুমী বিনা চিকিৎসায় গুরুতর আহত অবস্থায় এখনও বাসায় আছে এবং হাসপাতালে নেওয়ার কোন প্রকার চেষ্টা করেনি । মেীসুমীর আত্মীয়-স্বজন পুনঃরায় চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানায় এবং চেয়ারম্যান মহোদয় নিজেই ব্যবস্থা গ্রহণ করে মৌসুমীকে উদ্ধার করে ফুলবাড়ী হাসপাতালে ভর্তি করেন। ফুলবাড়ী হাসপাতালে চিকিৎসার পর ১১ আগষ্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তাকে লালমনিরহাট জেলা সদরে নেয়া হয়। সেখানে পরীক্ষা- নিরীক্ষা শেষে ১২ আগষ্ট বিকাল সাড়ে ৪ টায় আবারও তাকে ফুলবাড়ী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দিবাগত রাত ২ টার দিকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন মৌসুমী খাতুন।
বড়ভিটা ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মিন্টু এক সাক্ষাৎকারে বলেন, মৌসুমী শ্বশুর বাড়ির লোকজনের নির্যাতনে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার খবরটি শোনার পর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেই এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করি। আজকে মৃত্যুর খবর শুনে আবার দেখতে এসেছি। ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।
ফুলবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ প্রাণকৃষ্ণ দেবনাথ জানান, এ ঘটনায় নিহত গৃহবধুর চাচা নাসির আলী বাদী হয়ে স্বামী রাশেদুল ইসলাম আশিক সহ তিন জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বিকালে কুড়িগ্রাম মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।